মেন্যু
Menu

সম্পদের সাথে ঈমান ও আখলাকের সম্পর্ক

১৮ এপ্রিল, ২০২৫

সম্পদ বা অর্থনীতির সাথে জড়িত শরিয়তের অন্যতম মৌলিক মাকসাদ হচ্ছে— এটাকে দু’টি মৌলিক উৎসের সাথে জুড়ে দেওয়া। এগুলো হচ্ছে—

১. সম্পদকে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের প্রতি ঈমান এবং রব্বানি গুণাবলির সাথে জুড়ে দেওয়া। আর এর ফলে বস্তু মিলিত হবে রুহের সাথে, দুনিয়া আখিরাতের সাথে এবং মাখলুক তার খালিকের সাথে।  

২. সম্পদকে আখলাক ও মূল্যবোধের সাথে জুড়ে দেওয়া, যাতে কোনোরূপ নৈতিক বাঁধাবন্ধন ব্যতিরেকেই অর্থনীতি মুক্তভাবে না এগিয়ে চলে, প্রবৃত্তির অনুসরণ না করে এবং কেবলই লাভের পিছনে না দৌঁড়ায়; এমনকি সেই লাভ যদি মানুষের জন্য ভয়াবহ ক্ষতি এবং মহাপাপ ডেকে আনে তাও।

সম্পদকে আল্লাহর প্রতি ঈমান ও রব্বানিয়্যাতের সাথে জুড়ে দেওয়া

অর্থ-সম্পদ বা অর্থনীতির সাথে সম্পৃক্ত শরিয়তের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাকসাদগুলোর একটি হচ্ছে— এটাকে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের প্রতি ঈমান এবং রব্বানি বৈশিষ্ট্যের সাথে জুড়ে দেওয়া। এই রব্বানি বৈশিষ্ট্যের মাঝে রয়েছে— আল্লাহর মারিফত, তাঁর মহব্বত, তাঁর জিকির, তাঁর শুকর, সঠিকভাবে তাঁর ইবাদত, কেবল তাঁর রহমতই আশা করা, তাঁর আজাবকেই ভয় করা এবং তাঁর ওপরই তাওয়াক্কুল করা ইত্যাদি। এই বৈশিষ্ট্যগুলোই একজন মুসলমানের জীবনের ‘রব্বানি’ বা আল্লাহমুখী দিকের ভিত্তি গড়ে তুলে আর এগুলো সবই আল কুরআনুল কারিম এবং সুন্নাহ থেকে উৎসারিত।

অর্থনীতির মাকসাদ নিয়ে ওপরে আমরা যা বলেছি, তার সুস্পষ্ট জ্ঞানতাত্ত্বিক ভিত্তি আছে, পাটাতন আছে। আর তা হলো—   

১. আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এই জগতের সবকিছু সৃষ্টি করেছেন, যেন মানুষ তাকে চিনতে পারে, তার ইবাদত করে এবং সুমহান খালিক, সুউচ্চ রব ও অসংখ্য অগণিত নিয়ামতের দাতা হিসেবে তাঁর যথার্থ হক আদায় করে। আল্লাহর মর্যাদা উপলব্ধি করতে আমাদের জন্য এতটুকুই যথেষ্ট, তিনি মানুষকে জীবন দান করেছেন, দিয়েছেন আকল ও ইচ্ছাশক্তি এবং তাদের উপকারের জন্য আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে, তার সবই তাদের অধীন করে দিয়েছেন। 

আল্লাহ তায়ালা বলেছেন—

“আল্লাহই সৃষ্টি করেছেন আসমান এবং অনুরূপ জমিন, তাদের মধ্যেই নেমে আসে তার নির্দেশ; যাতে তোমরা জানতে পার, আল্লাহ সবকিছুর ওপর ক্ষমতাবান এবং জ্ঞানে আল্লাহ সবকিছু পরিবেষ্টন করে আছেন।” সূরা তালাক : ১২

অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন, যাতে আমরা তাঁকে চিনতে পারি, তাঁর মানিফত হাসিল করতে পারি। তাঁকে চিনতে পারি— তাঁর ‘আসমাউল হুসনা’ বা সুন্দর সুন্দর নাম এবং সুমহান গুণাবলির (সিফাতের) মাধ্যমে; বিশেষত তাঁর নিরঙ্কুশ ক্ষমতা ও সর্বব্যাপী জ্ঞান৷

তাঁর সর্বব্যাপী জ্ঞানের দাবিই হচ্ছে— আমরা যেন একমাত্র, কেবল তাঁরই ইবাদত করি। তাঁর ইবাদতই আমাদের সর্বপ্রথম দায়িত্ব এবং (মানুষ হিসেবে) আমাদের সৃষ্টির সর্বোচ্চ লক্ষ্য। যেমনটি আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেছেন—

“আর আমি সৃষ্টি করেছি জিন এবং মানুষকে এজন্যেই যে, তারা কেবল আমার ইবাদাত করবে। আমি তাদের কাছ থেকে কোনো রিযিক চাই না এবং এটাও চাই না, তারা আমাকে খাওয়াবে। নিশ্চয় আল্লাহ, তিনিই তো রিযিকদাতা, প্রবল শক্তিধর, পরাক্রমশালী।” সূরা যারিয়াত : ৫৬-৫৮

২. মানুষ বলতে তার শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বা দেহকোষসমেত গঠিত বাহ্যিক আবরণকে বোঝায় না। বোঝায় না তার সেই অস্থিমজ্জাকেও, যাকে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পরিয়েছেন রক্ত, গোশত, স্নায়ু ও শিরার পোশাক। বরং মানুষের আসল হাকিকত হচ্ছে তার সেই অংশ, যা দেখা যায় না। আর তা হচ্ছে— তার রুহ বা কলব কিংবা অন্তর যাই বলি না কেন, যেই নামেই ডাকি না কেন। এটাই মানুষের আসল হাকিকত। এর মাধ্যমেই মানুষকে সম্বোধন করা হয়েছে (আল্লাহর তরফ থেকে),  তার ওপর তাকলিফের দায়িত্ব চাপানো হয়েছে, তাকে আদেশ করা হয়েছে, নিষেধ করা হয়েছে এবং এর ওপর ভিত্তি করেই মানুষকে প্রতিদান বা শাস্তি দেওয়া হবে। আদম আ. সৃষ্টির ঘটনায় এমনটিই ইশারা করেছেন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। আদম আ. কে আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে কিংবা গন্ধযুক্ত কাদার শুষ্ক ঠনঠনে কালচে মাটি থেকে। তারপর তিনি তাকে সুষম করেন এবং তার মাঝে ফুঁকে দেন নিজের তরফ থেকে রুহ। আর এই ইলাহি ফুঁকের কারণেই আদম আ. সম্মান ও মর্যাদার হকদার হোন এবং ফিরিশতারা তাকে সিজদা করে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেছেন—

“অতঃপর যখন আমি তাকে সুঠাম করব এবং তাতে আমার তরফ থেকে রূহ সঞ্চার করব, তখন তোমরা তার প্রতি সিজদাবনত হয়ো।” সূরা হিজর : ২৯

অর্থ-সম্পদ মানুষের বস্তুগত খাবারের যোগান দেয়, মিটায় তাদের বস্তুগত চাহিদা যেমন— খাবার-দাবার, পোশাক-আশাক ও বাসস্থান ইত্যাদি। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না, একজন প্রকৃত মানুষের আরও কিছু চাহিদা আছে, আছে আরও কিছু প্রয়োজন। অতি অবশ্যই সেগুলোও পূরণ করতে হবে, যদি কেউ প্রকৃত অর্থেই মানুষ হতে চায়। মানুষ রাখতে হবে— কেবল রুটির মাধ্যমেই মানুষ বেঁচে থাকে না, যেমনটি বাইবেলে বলা হয়েছে। 

৩. সম্পদের আসল মালিক মানুষ নয়; বরং আসল মালিক হচ্ছেন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন, যিনি এই সম্পদের সৃষ্টিকর্তা এবং মানুষেরও।  এ কারণেই ইসলামি জীবনব্যবস্থায় এই মৌলিক চিন্তা খুবই মজবুতভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়ে আছে যে, ‘সম্পদ আল্লাহর আর মানুষ কেবল এতে খিলাফতের দায়িত্বপ্রাপ্ত।’ যেমনটি আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেছেন—

“আল্লাহ তোমাদের যা কিছুর উত্তরাধিকারী করেছেন, তা হতে ব্যয় কর।” সূরা হাদিদ : ০৭

অর্থাৎ মানুষ অর্থ-সম্পদের ব্যাপারে মুসতাখলাফ বা খিলাফতের দায়িত্বপ্রাপ্ত। ভিন্নভাবে বলতে গেলে, মানুষ অর্থ-সম্পদের ব্যাপারে তার আসল মালিকের পক্ষ থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত, তার প্রতিনিধি এবং তার কাছে আমানতদার, ঠিক যেমনটি হয়ে থাকেন কোষাধ্যক্ষ বা ক্যাশিয়ার। স্বাধীনভাবে নিজের মনমতো ব্যয় করার অধিকার কোষাধ্যক্ষের থাকে না; বরং সে থাকে মূল মালিকের আদেশ-নিষেধ ও দিকনির্দেশনার গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ। 

আল কুরআনুল কারিম অন্য একস্থানে সম্পদের হকদারদের ব্যাপারে বলছেন—

“আল্লাহ তোমাদেরকে যেই সম্পদ দিয়েছেন, তা হতে তোমরা তাদেরকে দান কর।” সূরা নূর : ৩৩

অতএব একজন সচ্ছল বা ধনী মুসলমান যেই সম্পদ উপার্জন করে, নিজ মালিকানার প্রতি নিসবত করে এবং নিজের নামে রেজিস্ট্রার করে, সে মনে করে— এটা তার কাছে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের তরফ থেকে আমানত এবং তাঁরই একান্ত রহমত। তাই সে এই সম্পদকে তাঁর নির্দেশিত পন্থা ছাড়া অন্য পন্থায় ব্যয় এবং তাঁর নির্দেশিত পন্থায় কৃপণতা করাকে বৈধ মনে করে না। এমনটি করলে সে যোগ্য হবে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নিন্দা ও ভৎসর্নার। আল্লাহ তায়ালা বলছেন—

“আর আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে যা দিয়েছেন তাতে যারা কৃপণতা করে, তাদের জন্য তা মঙ্গল, এমনটি যেন তারা কিছুতেই মনে না করে। বরং তা তাদের জন্য অমঙ্গল। যেটাতে তারা কৃপণতা করবে, কিয়ামতের দিন সেটাই তাদের গলায় বেড়ী হবে। আসমান ও জমিনের সত্ত্বাধিকার একমাত্র আল্লাহরই। তোমরা যা কর, আল্লাহ তা বিশেষভাবে অবহিত।” সূরা আল ইমরান : ১৮০

ছাগল চরানো এক বেদুঈন মুসলিম রাখালকে সওয়াল করা হয়েছিল—   

‘এই ছাগলগুলো কার, রাখাল?’

রাখাল জবাব দেয়—

‘এগুলো আল্লাহর, আছে আমার কাছে।’

কতইনা চমৎকার, কতইনা সত্য তার এই জবাব!

প্রকৃতপক্ষে কেউ যদি গভীরভাবে চিন্তা করে কীভাবে কোনো সম্পদ উৎপাদিত হয়, তাহলে সে দেখতে পাবে এর সৃষ্টি, বিকাশ এবং সম্পদ হয়ে ওঠার পিছনে সর্বান্তকরণে আল্লাহ তায়ালার হাতই কাজ করে। এমনকি সম্পদ উৎপাদনে মানুষের যেই পরিশ্রম, তাও আল্লাহ তায়ালা সাহায্য ও তৌফিকের ফলেই হয়ে থাকে।

আপনি তাকান শস্য ও ফলের দিকে। কে সৃষ্টি করেছে সেই মাটি, যা উৎপাদন করে শস্য এবং গাছপালা? কেই-বা সেই মাটিতে দান করেছে এমনসব বৈশিষ্ট্য ও গুণাগুণ, যা তাকে গাছপালা ও বৃক্ষলতার প্রয়োজনীয় সব উপকরণ যোগানে যোগ্য করে তুলেছে?

কে এই মাটিকে সেই খাবার, বায়ু ও আলো দিয়ে সাহায্য করছে, যা তার প্রয়োজন?

কে সৃষ্টি করেছে শস্যের বীজ, যা গাছপালার মূল?

কে এই বীজকে আসমান থেকে নেমে আসা কিংবা নদীতে বয়ে যাওয়া পানির মাধ্যমে বেড়ে উঠতে সাহায্য করছেন?

কেই-বা প্রণয়ন করেছে সেই সকল প্রাকৃতিক রীতিনীতি (সুন্নাহ), যার আলোকেই চলছে উৎপাদনের ব্যবস্থা?

তিনি হচ্ছেন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। যেমনটি তিনি বলেছেন—

“আর তাদের জন্য একটি নিদর্শন মৃত জমিন, যাকে আমরা জীবিত করি এবং তা থেকে বের করি শস্য, অতঃপর তা থেকেই তারা খেয়ে থাকে। আর সেখানে আমরা সৃষ্টি করি খেজুর ও আঙুরের বাগান এবং সেখানে উৎসারিত করি কিছু প্রস্রবণ, যাতে তারা খেতে পারে তার ফলমূল হতে; অথচ তাদের হাত এটা সৃষ্টি করেনি। তবুও কি তারা কৃতজ্ঞতা প্ৰকাশ করবে না?” সূরা ইয়াসিন : ৩৩-৩৫

তারা সেই বাগান থেকে ফল খেয়ে বেঁচে থাকছে, অথচ তাদের হাত তা সৃষ্টি করে নি; সৃষ্টি করেছে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের হাত। যেমনটি একই সূরায় আল্লাহ তায়ালা বলছেন—

“আর তারা কি লক্ষ্য করে না, আমাদের হাত যা সৃষ্টি করেছে? তা থেকে তাদের জন্য আমরা সৃষ্টি করেছি গবাদিপশু, অতঃপর তারাই এগুলোর অধিকারী।” সূরা ইয়াসিন : ৭১

সম্পদের আসল মালিক তার নামধারী মালিককে আদেশ করেছেন, সে যেন তার সম্পদ থেকে ওয়াজিব হকগুলো যথাযথভাবে আদায় করে এবং তা তার হকদারদের কাছে পৌঁছে দেয়। সম্পদের সর্বপ্রথম ওয়াজিব হক হচ্ছে— ফরজ যাকাত। যাকাত ইসলামি জীবনব্যবস্থার কর্মগত রুকনগুলোর মাঝে তৃতীয়। সম্পদের আসল মালিক আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আদেশ করছেন, বান্দা যেন এই যাকাত আদায়ের মাধ্যমে তাঁর ইবাদত করে। যাকাত ছাড়াও অন্যান্য ওয়াজিব হকগুলো আদায় করার নির্দেশনাও দিয়েছেন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন।  

সম্পদের আসল মালিকই তার নামধারী মালিককে আদেশ করছেন, সে যেন কোনো বৈধ পন্থা ছাড়া সম্পদ উপার্জন না করে এবং বৈধ কোনো পন্থা ছাড়া সম্পদের বৃদ্ধিও না ঘটায়। তিনি আরও আদেশ করছেন, সে যেন কোনো হক আদায়ে কৃপণতা না করে এবং এমন কোনো খাতে সম্পদ ব্যয় না করে, যা আল্লাহ তায়ালাকে অসন্তুষ্ট করে; যেমন— মদ ও জুয়া। তিনি আরও আদেশ করছেন, সে যেন সম্পদ ব্যয়ে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করে এবং কোনো প্রকার আর্থিক ব্যয়েই হালালের সীমা পরিত্যাগ করে হারামের পথে পা না বাড়ায়।

অতএব সম্পদের ব্যাপারে মুসতাখলাফ ব্যক্তি অর্থাৎ যে খিলাফতের দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছে, তার আসল কর্তব্য হচ্ছে— সম্পদের আসল মালিকের আনুগত্য করা, তার আদেশ-নিষেধ মেনে চলা এবং সর্বোপরি সম্পদের বৃদ্ধি, বিকাশ, ব্যয় ও বিনিময়ে তাঁরই নির্দেশনার অনুসরণ করা।

সম্পদ আল্লাহ তায়ালার আনুগত্যে সহায়ক

সম্পদের আরও একটি রব্বানি দিক আছে। আর তা হচ্ছে— সম্পদ আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের আনুগত্যে সহায়ক। এই সম্পদই একজন মুসলমানকে সক্ষম করে তুলে সদকা আদিয়া (সাধারণ সদকা) এবং সদকা জারিয়া প্রদান করার। সদকা জারিয়া হচ্ছে চিরস্থায়ী সদকা, যেমন— কল্যাণমূলক কাজে ওয়াকফ। 

সম্পদই মুসলমানদের সাহায্য করে কল্যাণমূলক কাজে অংশগ্রহণ করতেস যেমন— এতিমদের তত্ত্বাবধান, মিসকিন ও মুসাফিরদের দেখাশোনা এবং কল্যাণমূলক ও দাতব্য সংস্থা প্রতিষ্ঠা করা ইত্যাদি।

একইভাবে সম্পদ তার মালিককে সহযোগিতা করে হজ্জ ও উমরা আদায় করতে, আল্লাহর রাস্তায় খরচ  করতে, ইসলামের প্রচার ও প্রসার ঘটাতে, দাঈদের সাহায্য করতে এবং তাদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোর ব্যবস্থা করে দিতে। এ কারণেই নবিজি সা. বলেছেন—

نِعْمَ المالُ الصَّالحُ للرَّجُلِ الصالحِ.

“উত্তম সম্পদ উত্তম লোকের জন্য কতইনা ভালো!” 

সম্পদ ও অর্থনীতিকে আখলাক ও মানবিক মূল্যবোধের সাথে জুড়ে দেওয়া

শরিয়তের একটি মাকসাদ যেমন সম্পদ ও অর্থনীতিকে ঈমান ও রব্বানি গুণাবলির সাথে জুড়ে দেওয়া, ঠিক তেমনি তার আরেকটি মাকসাদ হচ্ছে— সম্পদ ও অর্থনীতিকে আখলাক ও উন্নত মানবিক মূল্যবোধের সাথে জুড়ে দেওয়া।

পশ্চিমা অর্থনীতি আখলাক থেকে বিচ্ছিন্ন, একইভাবে বিচ্ছিন্ন দ্বীন ও ঈমান থেকেও। বিপরীতে ইসলামি অর্থনীতির রয়েছে ঈমান ও আখলাকের সাথে এক সুদৃঢ় রিশতা।

ইসলাম মনে করে, মানুষের জীবন হচ্ছে এক এমন এক পাকানো বৃত্তের মতো, যার এক অংশ জড়িয়ে আছে আরেক অংশের সাথে। তাই জীবনের জন্য এটাই ভালো হবে, তা যেন তার কোনো একটি দিক বা বিভাগেও আখলাক এবং উন্নত মূল্যবোধ থেকে বিচ্ছিন্ন না হয়। জীবনকে আখলাক ও উন্নত মূল্যবোধ থেকে বিচ্ছিন্ন করার মানে হলো— দেহকে রুহ থেকে আলাদা করা কিংবা যন্ত্রকে তার একান্ত জরুরি রোধক থেকে আলাদা করা।

পশ্চিমারা জ্ঞানকে আখলাক থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে৷ তারা আরও বিচ্ছিন্ন করেছে কর্ম থেকে আখলাকে, রাজনীতি থেকে আখলাককে এবং যুদ্ধ থেকে আখলাককে। একইভাবে, তারা অর্থনীতি থেকেও আখলাকে আলাদা করে দিয়েছে।

আর আখলাক থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার মানে হলো— মন বা প্রবৃত্তি যা চায়, সেই অনুযায়ী চলা কিংবা মানুষের বস্তুবাদী, ব্যক্তিগত ও তাৎক্ষণিক স্বার্থ যাতে হাসিল হয়, সেই অনুযায়ী কাজ করা। তখন আর মানুষ একটুও চিন্তা করে না, তার এই কাজের ফলে অন্যের কী ক্ষতি হচ্ছে, অন্য কী সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে। সে কেবল নিজের কথা ভাবে। সে বলতে থাকে— নাফসি, নাফসি। এই ধরনের আখলাহীন চিন্তা ও কর্ম পরিশেষে তামাম সমাজেরই ক্ষতি ডেকে আনে।

তাই যার হাতে অর্থসম্পদ থাকবে, তার কর্তব্য হচ্ছে এই অর্থসম্পদ ব্যবহারে আখলাক ও  উন্নত মূল্যবোধ অনুসরণ করে চলা। বরং এরও আগে সম্পদ উপার্জনের সময়ই তার এই মূল্যবোধগুলো মেনে চলা আবশ্যক। তাই কোনোভাবেই জুলম বা প্রতারণার মাধ্যমে, কুরআন যাকে বলছে বাতিল পন্থায় সম্পদ উপার্জন করা যাবে না। বাতিল পন্থা বলতে সম্পদ উপার্জন ও বৃদ্ধির সকল অবৈধ পন্থাকে বোঝানো হচ্ছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেছেন—

“হে ঈমানদারগণ, তোমরা একে অপরের সম্পত্তি বাতিলভাবে গ্রাস করো না; কিন্তু তোমাদের পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে ব্যবসা করা বৈধ।” সূরা নিসা : ২৯

আল্লাহ তায়ালা আরও বলেছেন—

“আর তোমরা নিজেদের মাঝে একে অন্যের অর্থ সম্পদ বাতিলভাবে ভক্ষণ করো না এবং মানুষের ধন-সম্পত্তির কিছু অংশ জেনে বুঝে অন্যায়ভাবে আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে বিচারকদের কাছে উপস্থাপন করো না।” সূরা বাকারা : ১৮৮  

এছাড়াও, সম্পদ বিষয়ক ইসলামি শরিয়তের বিধিবিধান ও দিকনির্দেশনা নিয়ে কেউ যদি চিন্তা করে, তাহলে সে সুস্পষ্টভাবে দেখতে পাবে— ইসলাম সম্পদ ও অর্থনীতির সকল দিক ও বিভাগে আখলাক ও উন্নত মূল্যবোধকে ফরজ করে দিয়েছে। ইসলাম বলছে, সম্পদ উৎপাদন, খরচ, বণ্টন ও বিনিময়সহ সর্বাবস্থায়ই আখলাক মেনে চলতে হবে। ইসলাম চায় না, এই সকল দিক ও বিভাগের কোনো একটিতেও অর্থনীতি আখলাকবিহীন পথ চলুক।  

তাই ইসলাম হারাম বা মানুষের ক্ষতি করে এমন কোনো কিছু  উৎপাদন করার অনুমতি দেয় না। যেমন— নেশা জাতীয় দ্রব্য, এমনকি সিগারেটও। ইসলাম এমন কোনো শিল্পকর্ম ও নাটক সৃষ্টিও সমর্থন করে না, যা সমাজে ছড়িয়ে দেয়— অশ্লীলতা ও অনৈতিকতা। এসব অশ্লীলতা ও অনৈতিকতার চেয়ে ক্ষতিকারক বিষয় হচ্ছে সেগুলো, যা সমাজে প্রসার ঘটায়— চিন্তা ও বৃদ্ধিবৃত্তিতে সেকুলারিজম, চালচলনে স্বেচ্ছাচারিতা এবং আকিদা-বিশ্বাসে সংশয়বাদ।   

ইসলাম যেমন এগুলোর উৎপাদন ও বাজারজাতকরণকে সমর্থন করে না, ঠিক তেমনিভাবে সমর্থন করে না এগুলোর ক্রয়বিক্রয়ও। 

এমনকি ইসলাম হালাল কোনো কিছুর ব্যয়ও পরিমিত পরিমাণের বাইরে সমর্থন করে না। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেছেন—

“আর তোমরা খাও এবং পান কর; কিন্তু অপচয় কর না। নিশ্চয় তিনি অপচয়কারীদেরকে পছন্দ করেন না।” সূরা আরাফ : ৩১

ইসলাম বিলাসিতাকে নাকোচ করে, বিলাসীদের বিরোধিতা করে। ইসলাম তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে, কেননা এই বিলাসিতা একটি জাতিকে ধাবিত করে ফাসাদ ও ধ্বংসের দিকে। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন—

“আর আমরা যখন কোনো জনপদ ধ্বংস করতে চাই, তখন সেখানকার সমৃদ্ধশালী ব্যক্তিদেরকে আদেশ করি। ফলে তারা সেখানে অসৎকাজ করে; অতঃপর সেখানকার প্রতি দণ্ডাজ্ঞা ন্যায়সঙ্গত হয়ে যায় এবং আমরা তা সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত করি।” সূরা বনি ঈসরাইল : ১৬

একইভাবে সম্পদ বিনিময়ে ইসলাম হারাম করে দিয়েছে— সুদ, মজুদদারি, প্রতারণা, ধোঁকা, অন্যের জিনিসে ক্ষতি করা এবং ওজন ও পরিমাপে কম করাকে। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন—

“দুর্ভোগ তাদের জন্য যারা মাপে কম দেয়। যারা লোকদের কাছ থেকে মেপে নেয়ার সময় পূর্ণমাত্রায় গ্রহণ করে, আর যখন তাদেরকে মেপে দেয় তথবা ওজন করে দেয়, তখন কম দেয়। তারা কি বিশ্বাস করে না, তারা পুনরুত্থিত হবে, এক মহা দিবসে? যেদিন দাঁড়াবে সকল মানুষ বিশ্বজাহানের রবের সামনে।” সূরা মুতাফফিফিন : ১-৬

ইসলামি অর্থনীতির আখলাকি দিকের ব্যাপারে অমুসলিমদের স্বীকৃতি

বহু অমুসলমান পাঠকও ইসলামি অর্থনীতির এই বৈশিষ্ট্যটি লক্ষ করেছে। তাদের নজর কেড়েছে, কীভাবে ইসলাম অর্থনীতি ও আখলাকের মাঝে সমন্বয় ঘটিয়েছে; অথচ মানবরচিত অন্যান্য অর্থনৈতিক মতবাদগুলো অর্থনীতিকে আখলাক থেকে বিচ্ছিন্ন বিবেচনা করেছে, হোক তা পুঁজিবাদী অর্থনীতি কিংবা কমিউনিস্ট অর্থনীতি।

বিশিষ্ট ফরাসি লেখক Jacques Ostroy তার ‘ইসলাম ও অর্থনৈতিক বিকাশ’ গ্রন্থে বলেছেন—

  • “ইসলাম একইসাথে জীবন বাস্তবতা এবং উন্নত আখলাকি আদর্শবাদিতার জীবনব্যবস্থা। ইসলামি জীবনব্যবস্থার এই দু’টি দিক একটি অপরটির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কখনোই একটি অপরটি থেকে আলাদা হয় না। তাই আমরা বলতেই পারি— মুসলমানরা কখনোই এমন কোনো অর্থনীতি মেনে নিবে না, যা প্রকৃতিগত দিক থেকে সেকুলার। অন্যদিকে, যেই অর্থনীতি কুরআনি ওহি থেকে তারক্তি সঞ্চয় করে, তা  অতি আবশ্যিকভাবেই আখলাকি অর্থনীতি হতে বাধ্য।

    আর এই আখলাকই ‘মূল্য’ পরিভাষাকে এক নতুন অর্থ প্রদান করে এবং উৎপাদন প্রক্রিয়ার ফলে যে অশুভ ফলাফল প্রকাশ পাচ্ছে, তার বুদ্ধিবৃত্তিক শূন্যতা পূরণ করতে পারে। 

    ব্রিকসও পাশ্চাত্যের বর্তমান এই যৌন ভোগবাদী সভ্যতার নিন্দা জানিয়েছে। হাকিকতের মূল্যবোধের ওপর কামনা-বাসনার মূল্যবোধ প্রভাব বিস্তারের কারণে অর্থনীতিও আজ উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে পড়েছে। 

    অস্থিতিশীল দুনিয়া নিয়ে বিশ্বব্যাপী আলোচনার ফলে পশ্চিম এখন এই নেতিবাচক ফলাফলগুলো সম্পর্কে সচেতন হওয়া শুরু করেছে...।  মানুষ এখন দেখতে পাচ্ছে, সে নিজেই তার কর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন। ফলে যন্ত্রই এখন হয়ে ওঠেছে ‘বস’। মানুষের বিশ্রাম ও আরামের উপকরণগুলো বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। যেমন গাড়ির কথাই বলা যাক। এখন গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে তুচ্ছ থেকে তুচ্ছ বিষয়ে, কিন্তু পাশ্চাত্যে কখনোই মানুষের সাথে যন্ত্রের বিরোধ কমানোর ব্যাপারে গুরুত্ব দেয় নি; অথচ এই যন্ত্রই মানবতার এত বিরাট অংশ জুড়ে রয়েছে।

    যন্ত্র ও মানুষের মাঝে পশ্চিমে বিদ্যমান এই দ্বন্দ্বমুখর অবস্থার বিপরীত শিক্ষাই সবসময় ইসলামি জীবনব্যবস্থায় হাজির ছিল। পশ্চিমের মোকাবিলা করার পাশাপাশি একইসাথে নিজের অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিও বাস্তবায়ন করতে ইসলাম অর্থনীতির মাঝে আখলাকের প্রবেশ ঘটিয়েছে। আর এর ফলেই অর্থনীতিতে বস্তুগত উপাদান আদালত ও ইনসাফের চাওয়া-পাওয়ার অধীন হয়ে গেছে।

    সি. পার্থ জোর দিয়েই বলছেন, অর্থনীতি ও আখলাকের এই সম্মিলন ইসলামি জীবনব্যবস্থায় আকস্মিকভাবে বা হঠাৎ করে হাজির হয় নি। ইসলাম কখনোই বস্তু আর রুহানিয়াতের মাঝে বিচ্ছিন্নতাকে সমর্থন করে নি।

    যদিও প্রোটেস্ট্যানটিজমের সাথে শিল্পের বিকাশের সংযোগ মিথ্যা এবং উভয়টির পারস্পরিক সম্পর্কও বিতর্কের বিষয়; কিন্তু ইসলামি জীবনব্যবস্থায় এমনটা নয়। কেননা ইসলামি ইলাহি শরিয়তের বিশ্বজনীনতাই এমন প্রত্যেক অর্থনৈতিক বিকাশকে নাকোচ করে, যা এর মূলনীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত নয়।

    পশ্চিমের ঐতিহ্যের অভিজ্ঞতা বলছে— যা কায়সারের, তা কায়সারকে দিয়ে দাও; আর যা আল্লাহর, তা আল্লাহকে দিয়ে দাও। আর এ কথা সবারই জানা, ইসলামি জীবনব্যবস্থায় এই ধরনের বিভাজন অসম্ভব। দ্বীনকে রাষ্ট্র থেকে আলাদা করার এই চিন্তা, যা পাশ্চাত্যে বস্তুগত কর্মতৎপরতা নিয়ে এসেছে, ইসলামি  জীবনব্যবস্থায় এর কোনো মূল্যই নেই। এই বিভাজন ইসলামি  জীবনব্যবস্থায় বুদ্ধিবৃত্তি এবং তার বাইরের জগতেও কোনো বস্তুগত কর্মতৎপরতারই জন্ম দেয়। ইসলামি  জীবনব্যবস্থায়বস্তুগত কর্মতৎপরতার বিকাশ ঘটে কেবলই ইসলামের শক্তি থেকে, নাজিল করা ইলাহি ওহির শক্তি থেকে।” 

বাস্তব অবস্থা পর্যবেক্ষণ করলেও আমরা দেখতে পাব, মুসলমানদের ইতিহাসে অর্থনীতি ও আখলাকের এই সমন্বয়ের প্রভাব সুস্পষ্ট ও সুগভীর; বিশেষত ইসলাম যখন মুসলমানদের জীবনে প্রথম ও প্রধান প্রভাবক ছিল, ইসলাম যখন তাদের সকল কাজকর্ম ও চালচলনের প্রথম নির্দেশক ছিল।  

মানব রচিত অর্থনৈতিক মতবাদ ও অর্থনীতির প্রধান সমস্যা

মানব রচিত অর্থনৈতিক মতবাদে বিশ্বাসীরা মনে করে, অর্থনীতির সর্বপ্রথম সমস্যা হচ্ছে— সম্পদের দুষ্প্রাপ্যতা (Scarcity)। এই কথার মাধ্যমে তারা বোঝাতে চায়, মানুষের চাহিদা ও প্রয়োজনের নিরিখে সম্পদ খুবই সীমিত। আর এ কারণেই সম্পদের ব্যাপারে মানুষ একে অপরের সাথে প্রতিযোগিতা করে; এমনকি খুনোখুনি পর্যন্তও করে থাকে।

কিন্তু ইসলামি অর্থনীতিতে বিশ্বাসীরা মনে করে, সম্পদের মূল কথা দুষ্প্রাপ্যতা নয়; বরং প্রাচুর্যতা বা পর্যাপ্ততা। তারা বিশ্বাস করে, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এই জমিনে সকল মানুষেরই রিজিকের ব্যবস্থা করেছেন। তিনি বলছেন—

“আর জমিনে বিচরণকারী সবার জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহরই।” সূরা হুদ : ৬

জমিন সৃষ্টি করে আল্লাহ তায়ালা তাতে—

“ঢেলে দিয়েছেন বরকত এবং তাতে ব্যবস্থা করেছেন খাদ্যের।” সূরা ফুসসিলাত : ১০ 

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আরও বলছেন—

“আর অবশ্যই আমরা তোমাদের জমিনে প্রতিষ্ঠিত করেছি এবং তাতে তোমাদের জন্য জীবিকার ব্যবস্থাও করেছি; তোমরা খুব অল্পই কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর।” সূরা আরাফ : ১০

“তোমরা কি দেখ না, নিশ্চয় আল্লাহ আসমানসমূহ ও জমিনে যা কিছু আছে সবকিছুই তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন এবং তোমাদের প্রতি তাঁর প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করেছেন?” সূরা লুকমান : ২০

এই ধরনের আরও অসংখ্য আয়াত আছে, যাতে মানুষের ওপর আল্লাহ তায়ালার অফুরন্ত নিয়ামতের কথা বলা হয়েছে। আল্লাহ বলছেন—

“আর তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ গুণলে তার সংখ্যা নির্ণয় করতে পারবে না। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” সূরা নাহল : ১৮

ইসলামি অর্থনীতি মনে করে, অর্থনীতির মূল সমস্যা হচ্ছে— মানুষ। আল কুরআনুল কারিমে আমরা দেখতে পাই, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মানুষের ওপর তাঁর আসমান ও জমিনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অসংখ্য অগণিত বিশাল বিশাল নিয়ামত গণনা করার কথা বলে মানুষের ব্যাপারে বলছেন—

“তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ গুণলে তার সংখ্যা নির্ণয় করতে পারবে না। নিশ্চয় মানুষ অতি মাত্রায় জালিম, অকৃতজ্ঞ।” সূরা ইবরাহিম : ৩৪

এই আয়াত আমাদের নির্দেশ করছে, সবকিছুর আগে সমস্য নিহিত মানুষের মাঝে। সমস্যা নিহিত তার নিজের ওপর এবং অন্যের ওপর জুলুম করার মাঝে, নিজের দায়িত্ব পালন না করার মাঝে। সমস্যা নিহিত আল্লাহর দেওয়া নিয়ামতের ব্যাপারে কুফরি করার মাঝে। প্রকৃতপক্ষে, আল্লাহর দেওয়া নিয়ামতের ব্যাপারে কুফরি করা, না শুকরিয়া করাই হচ্ছে— সকল সমস্যার মূল।


(তরজমা করেছেন
মু. সাজ্জাদ হোসাইন খাঁন)